কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ডা. ইসরাত জাহান স্পেশালাইজড হাসপাতাল নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের ভুলে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি হন অন্তঃসত্ত্বা নারী পারভিন বেগম (২৬)। ঐ দিনই মধ্যে রাতে তার অস্ত্রোপচার করা হয়, তিনি এক ছেলেসন্তানের জন্ম দান করেন।
কিছুক্ষণ পরই পারভিনের পরিবারের সদস্যদের জানানো হয় পারভিন মৃত সন্তান প্রসব করেছেন। হাসপাতালের পক্ষ থেকে কার্টনবন্দী করে পরিবারের সদস্যদের কাছে নবজাতকের মরদেহ তুলে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে কার্টুন বন্দি ওই নবজাতককে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে আনার পরই মরদেহ দেখে পরিবারের লোকজন সন্দেহ করতে শুরু করে নবজাতকটি জীবিত ছিল। চিকিৎসকের ভুলেই তার মৃত্যু হয়েছে।
পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালে নবজাতক মৃত শিশুটিকে দাফনের আগে মৃতদেহের গোসল করাতে গেলে, শিশুটির বাঁ গালে কাটার চিহ্ন দেখেন। অস্ত্রোপচারের সময় গাল কেটে ফেলার কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
পারভিন বেগম উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের আগানগর গ্রামের আল আমিনের স্ত্রী। শিশুটির পিতা আল আমিন মিয়া আজ বেলা ১১টার দিকে মৃত সন্তান নিয়ে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনার তদন্ত দাবি করেন। এ বিষয়ে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। পেশায় ব্যবসায়ী আল আমিন আগের ২টি সন্তান রয়েছে।
অভিযোগে আলামিন জানান, আজ সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, কার্টনের বাক্সে
আমার সন্তানের গাল কেটে ফেলছে, এই কথা আমাকে জানানো হয়নি। হয়তো আমার সন্তান জীবিত ছিল। গাল কেটে ফেলার কারণে মৃত্যু হয়েছে। আমি এই ঘটনার তদন্তসহ বিচার চাই।
মৃত সন্তান গ্রহণের সময় গাল কাটার চিহ্ন চোখে পড়েছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আল আমিন জানান, কার্টন বন্ধ থাকায় ওই সময় লক্ষ্য করিনি। সকালে দাফন পূর্ব গোসলের উদ্দেশ্যে কার্টন খোলার পরই এটা চোখে পড়ে।
এই ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
কিন্তু এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কিশোর কুমার ধর কর্মস্থলে ছিলেন না। তাঁর কক্ষে ছিলেন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুল করিম। অভিযোগটি তিনি গ্রহণ করেছেন বলে জানান।
এই দিকে ডা. ইসরাত জাহান স্পেশালাইজড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রসবের সময় বাচ্চা মৃত ছিল। পরিবারের সদস্যদের ডেকে এনে দেখানো হয় এবং বুঝিয়ে দেওয়ার সময় বাচ্চার গাল কাটা ছিল না।
অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন, হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাইনি কনসালট্যান্ট ইসরাত জাহান। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
অপরদিকে হাসপাতালের ম্যানেজার মাজহারুল ইসলামকেও ফোন করলে তিনি ফোন ধরেন না।
ইসরাত জাহানের স্বামী ডা.ফরহাদ আহমেদ বলেন, রোগীর (পারভিন) অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। জরায়ু ফেটে গিয়েছিল। মূলত রোগীর পরিবারের সদস্যদের আগ্রহে আমরা ঝুঁকি নিয়েছিলাম। এ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের আগে বারবার জানানো হয় বাচ্চা বাঁচানো অসম্ভব। তাঁরা এই বাস্তবতা মেনে অস্ত্রোপচারে করতে বলেন। মৃত বাচ্চা প্রসবের পরপর পরিবারের লোকজন এনে দেখানো হয়। আমরা পরিবারের লোকজনের কাছে যখন মৃত বাচ্চা হস্তান্তর করি, তখন বাচ্চার গালে আঘাতের চিহ্ন ছিল না।
এ সম্পর্কে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.আব্দুল করিম জানান, মৃত নবজাতকের বাঁ গালে কাটার আঘাত রয়েছে দেখতে পেলাম। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডাক্তার কিশোর কুমার জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি এবং একটি লিখিত অভিযোগও পেয়েছি। পরবর্তীতে জেলার সিভিল সার্জন স্যারকে অবহিত করে, উনার নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিশোরগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার অভিজিৎ শর্মার জানান, সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি ঘটনাটি জানতে পেরেছি। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।