চব্বিশের বন্যায় এক ভয়াবহ পানিতে ডুবেছিল ফেনীর বাসিন্দারা। ঠিক এই সময়টাতেই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। এবারও ফেনীতে প্রবল বর্ষণে জলাবদ্ধতার ফলে বন্যার আতঙ্ক দেলহা দিয়েছে। বিশেষত, পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৬ টি স্থানে ভয়াবহ ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত এসব ভাঙ্গন কবলিত স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলের জমি, মাছের ঘের ও বসতবাড়ি।
প্রশাসন ঘোষিত আশ্রয়ন কেন্দ্রে রাত ১১ টা পর্যন্ত ফুলগাজীতে ২০ জন ও পরশুরামে ৮৫ জন আশ্রয় নিয়েছে। রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে ভাঙ্গন বৃদ্ধি হওয়ার কারণে জনগণের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাসিন্দাদের সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ১৬টি স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত স্থান গুলোর মধ্যে মুহুরি নদীতে ১১টি, সিলোনিয়া নদীতে ৪টি ও কহুয়া নদীতে ১টি রয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এসব স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। নদী রক্ষা বাঁধের পানির চাপে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কের ফুলগাজী সদর বাজার ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ওই সড়কে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর সর্বশেষ তথ্য মতে, পরশুরাম উপজেলার মহুরি নদীর ভাঙনের স্থানগুলো হচ্ছে, চিথলিয়া ইউনিয়নে মধ্যম ধনীকুন্ডা, শালধর, নোয়াপুর, জংগলঘোনা বিদ্যালয়ের পাশে, জংগলঘোনা কালামিয়া বাড়ির পাশে ও পশ্চিম অলকায় ৩টিসহ মোট ৮টি স্থান। সিলোনিয়া নদীর মেলাঘর কবরস্থানের পাশে মির্জানগর ইউনিয়নের কালীকৃষ্ণনগর ও গদানগর দুটি স্থানসহ ৪টি স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে।
ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দেড়পাড়া গ্রামে ২টি ও উত্তর শ্রীপুর নাপিত কোনা নামকস্থানে ১ টিসহ মোট ৩টি স্থানে মুহুরি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
এদিকে পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের সাতকুচিয়া এলাকায় কহুয়া নদীর ১টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে লোকালয়ে নদীর পানি হুহু করে ঢুকতেছে।
পরশুরাম উপজেলার মধ্যম ধনীকুন্ডা, উত্তর ধনীকুন্ডা, নোয়াপুর, উত্তর সালধর, নোয়াপুর জঙ্গলগোনা, কুন্ডের পার, মালিপাথর, পাগলীর কুল, মির্জানগর ইউনিয়ন, বক্সমাহম্মুদ ইউনিয়নের সাতকুচিয়া গ্রামসহ ফুলগাজী উপজেলার কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পরশুরাম, ফুলগাজী উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড তথ্য অনুযায়ী, রাত ৮ টার দিকে নদীর পানি বিপদসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাতের মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আরো স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে।
ফেনীর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ফেনীতে ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা পূর্বে ফেনীতে সকল রেকর্ডকে অতিক্রম করেছে। দেশ জুড়ে মঙ্গলবার এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
তবে আগামী ২৪ ঘন্টায় পূর্বাভাসে বৃষ্টিপাত কমতে পারে বলে জানানো হয়েছে।