গত সপ্তাহে ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে ‘অপারেশন মহাদেব’ নামে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে দেশটির সেনা-আধাসামরিক-পুলিশ সমন্বিত বাহিনী। আর সেটিকে ‘সম্পূর্ণ বানোয়াট’ এবং ‘মিথ্যা ও কাল্পনিক তথ্যে পরিপূর্ণ’ বলে তকমা দিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানী ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা ‘অপারেশন মহাদেব’ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মন্ত্রণালটির মুখপাত্র শাফকাত আলী খান বলেন, “জম্মু-কাশ্মিরে তথাকথিত অপারেশন মহাদেব নিয়ে ভারত যা বলছে, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা ও কাল্পনিক তথ্যে পরিপূর্ণ। গোটা বিশ্ব জানে যে পেহেলগামে হামলার পর সেই ঘটনায় কোনো নির্ভরযোগ্য এবং যথাযথ তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তান আক্রমণ করেছিল ভারত।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে আমাদের কাছে পাকিস্তানের ভূখণ্ড রক্ষা করার ব্যাপারটি সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে এবং অপারেশন মহাদেব নিয়ে ভারত যা যা তথ্য জানাচ্ছে— সেসব আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।”
গত ২৮ জুলাই জম্মু-কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে খানিকটা দূরে মহাদেব পাহাড় সংলগ্ন দাচিগাম জঙ্গলে সেনা অভিযান ‘অপরেশন মহাদেব’ পরিচালনা করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জম্মু-কাশ্মির শাখার চিনার কমান্ড, আধাসামরিক বাহিনী সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) এবং জম্মু-কাশ্মির পুলিশ। অভিযানে সুলেমান, আবু হামজা এবং ইয়াসির নামে তিন ব্যক্তি নিহত হন।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর চিনার কোর এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দাবি, নিহত ৩ জনই পাকিস্তানের নাগরিক এবং পাকিস্তানি কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর ই তৈয়বা (লেট)-এর সদস্য।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে যে হামলা হয়েছিল— সেখানে অংশ নিতে পাকিস্তান থেকে এসেছিলেন তারা, কিন্তু পরে নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে কড়াকড়ি আরোপ হওয়ায় আর পাকিস্তানে ফিরতে পারেননি। জম্মু-কাশ্মিরেই থেকে গিয়েছিলেন।
অমিত শাহ জানিয়েছেন, নিহত তিনজনের কাছ থেকে পাকিস্তানি পরিচয়পত্র মিলেছে। তাছাড়া পেহেলগামে হামলার পর হামলাকারীদের যেসব ফরেনসিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, সেসবের সঙ্গেও সাদৃশ্য পাওয়া গেছে অপারেশন মহাদেবে নিহত তিন জনের সঙ্গে।
ব্রিফিংয়ে সময় শাফকান আলী খান আরও বলেন, “পেহেলগামে হামলার পর পাকিস্তান ওই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিল এবং তাতে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কাশ্মির নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দু’ দেশের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে— সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে তা সমাধানেরও প্রস্তাব দিয়েছিল; কিন্তু ভারত এসবের কোনোটিই মেনে না নিয়ে উপমহাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে।”
“তবে তারপরও পাকিস্তান এই অঞ্চলের শান্তি-স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ উপকায়ে কাশ্মির সংকট সমাধানের পক্ষে।”