জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নানা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রাজধানীতে সমাবেশ করতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে গঠিত দল এনসিপির দেশব্যাপী পদযাত্রা শেষে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আয়োজিত আজকের সমাবেশ থেকে ‘জাতীয় ইশতেহার’ ঘোষণা করবে দলটি।
বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগে ‘ছাত্র সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে সাইমুম শিল্পগোষ্ঠীর আয়োজনে চারদিন ব্যাপী ৩৬ জুলাই কালচারাল ফেস্ট ‘জুলাই জাগরণ’ অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিনের কর্মসূচি চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
আজকের সমাবেশের প্রস্তুতি জানাতে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছে এনসিপি। সংবাদ সম্মেলনে দলটির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘জুলাই সনদের ভিত্তিতেই পরবর্তী নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনী সংসদের হাতে সংস্কার কার্যক্রম ছেড়ে দিব না বরং জুলাই সনদের ভিত্তিতে সংসদ বা গণপরিষদ গঠিত হবে। এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময় থেকেই জুলাই সনদ কার্যকর করতে হবে।’
এছাড়া জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে বলে দাবি করেছেন নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচন ও সংসদ গঠিত হতে হবে।’
আজকের সমাবেশ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম জানান, শহীদ মিনারে আমাদের জুলাই পদযাত্রার পরিসমাপ্তি হবে। নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার হবে যেখানে এনসিপির পক্ষ থেকে আমরা রূপরেখা এবং কর্মসূচি ঘোষণা করব। সবাইকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আমাদেরকে এখনো নতুন বাংলাদেশের লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। জুলাই পদযাত্রা মূলত বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের দাবিতে ছিল। পাশাপাশি আমরা জুলাই সনদের কথাও বলেছিলাম। আমরা জানতে পেরেছি সরকার আগামী ৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে যাচ্ছে। আমরা সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
পাশাপাশি আমাদের দাবি ছিল ৫ আগস্টের মধ্যে যাতে জুলাই সনদের সুরাহা হয়। এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে কিছুকিছু জায়গায় দ্বিমত রয়েছে। যেসব বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে সেসব বিষয়ে এখনও ঐকমত্য কমিশনের পরিকল্পনা জানানো হয়নি। আমরা ঐকমত্য কমিশনে যে প্রশ্নটি তুলেছি এটার বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে তবে সেটি নিয়ে কমিশন কোনো কথা বলেনি। বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুরাহা হলে সকল দল এতে স্বাক্ষর করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এক বছরে জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল তার পূর্ণতা পায়নি। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল। জুলাই সনদের মাধ্যমে হয়তো এর আংশিক প্রাপ্তি পাওয়া যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।’
শাহবাগে বৃহৎ জমায়েতের টার্গেট ছাত্রদলের
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আজকের সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। গঠন করা হয়েছে প্রায় ৯০টি সাংগঠনিক টিম। দেশের সব জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীদের এতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ পরিবারের সদস্য ও আহতদেরও এই সমাবেশে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এ সমাবেশে সারা দেশে থেকে নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটিয়ে শক্তিমত্তা প্রদর্শনের পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠনটির। তবে গতানুগতিক কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এবারের ছাত্র সমাবেশ কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে করতে চান নেতারা। এজন্য সমাবেশে অংশগ্রহণ নিয়ে নেতাকর্মীদের প্রতি ছয় দফা বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ছাত্রদল। এর মধ্যে রয়েছে সমাবেশে কোনো ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসা যাবে না।
সমাবেশের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক ইউনিটকে থাকতে হবে। কাঁটাবন মোড় থেকে আজিজ সুপার মার্কেট ও পিজি হাসপাতালের মাঝের গলি দিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত পরিবহনকে চলাচলে সার্বিক সহায়তা করতে হবে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীকে বহনকারী কোনো ইউনিটের গাড়ি কোনো অবস্থাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। ব্যক্তিগত শোডাউন ও মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসা যাবে না। সমাবেশ শেষে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের নির্ধারিত স্থান পরিষ্কার করে যেতে হবে।
সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার পতনে আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রদল রাজপথের ভ্যানগার্ড হিসাবে কাজ করেছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনেও ছিল অগ্রণী ভূমিকা। ওই আন্দোলনে শুধু ছাত্রদলেরই ১৪২ নেতাকর্মী শহিদ হয়েছেন।
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, আমরা এই সমাবেশ থেকে জুলাই আন্দোলনে আত্মত্যাগ করা জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করব। এছাড়া এই সমাবেশ থেকে দেশ গঠনে ছাত্রসমাজকে সম্পৃক্ত করতে আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বিগত দিনের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার গণতান্ত্রিক দাবিও উঠে আসবে।