নিম্নচাপ ও প্রায় দেড় মাস ধরে ভারতীয় ইছামতি নদীর জোয়ারের পানি অব্যাহতভাবে প্রবেশ করায় যশোরের শার্শা উপজেলার রুদ্রপুর, বাইকোলা, ভবানীপুর, দাউদখালী, গোগা বিলপাড়া, আমলাই ও কায়বা গ্রামের শতাধিক পরিবার পানি বন্দি জীবন যাপন করছেন। মাঠ ঘাট ডুবে গেছে। কয়েকটি স্কুলের মাঠ ডুবে গেছে। অনেকের ঘর বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে।
মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের তীব্র সংকট। বন্যার ফলে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। অনেকের রান্নাঘরে পানি ওঠার ফলে রান্না করতেও অসুবিধা হচ্ছে। গো খাদ্যের অভাবে কচুরিপানা পানা খাওয়ানো হচ্ছে গবাদিপশুদের। বৃহৎ পরিসরে বন্যার আশংকা করছে এলাকাবাসী।
এদিকে সোমবার দুপুরে সীমান্ত এলাকায় ইছামতির নদী দিয়ে ভারতীয় পানিতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজিব হাসান। এসময় প্লাবিত এলাকার মানুষের খোঁজ খবর নেন তিনি। আগামীতে ইছামতির জোয়ারের পানি দাউদখালি খাল দিয়ে প্রবেশ করে শার্শার সীমান্ত এলাকা ভেসে যেতে না পারে এর জন্য খাল মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে বলে জানান।
রুদ্রপুর গ্রামের মফিজুল ইসলাম জানান, তার বাড়ির চারপাশে কোমর সমান পানি উঠেছে। কলার ভেলায় করে তিনি যাতায়াত করছেন।
আবুল হোসেন নামের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, তার মহল্লার ২৫/৩০ টি পরিবার গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তারা এখন নৌকায় যাতায়াত করছেন। মসজিদে যেতেও নৌকায় আসতে হচ্ছে।
গোগা বিলপাড়া গ্রামের লাল্টু নামে এক ব্যক্তি জানান, এমনিতেই বিল ফসলের ওপরে নির্ভরশীল এখানকার মানুষজন। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ স্লুইসগেট নির্মানের ফলে ইছামতী নদীর জোয়ারের পানিতে প্রতিবছর প্লাবিত হয় বিলের জমি। এ সমস্যা ৫০ বছর ধরে চলছে। তার ওপর চলতি বছর অতি বৃষ্টি ও ইছামতী নদী দিয়ে ভারতীয় পানি অব্যাহতভাবে প্রবেশ করায় বিল ছাপিয়ে পানি লোকলয়ে ঘর বাড়িতে ঢুকে পড়েছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। মানুষের কাজ নেই, অনেকের ঘরে খাবার নেই। দুরবস্থার মধ্য দিন কাটছে দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষগুলোর।
হাফিজুর রহমান নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, তার বাড়ির চারিপাশে পানি। ঘরের ভেতরেও পানি। ইট দিয়ে খাট উচু করে তার ওপর পরিবার নিয়ে বাস করছেন। ঘরে পানি ঢোকার কারণে রান্না করতে পারছে না। এদিকে ঘরে চাল নেই। ত্রাণও কেউ দিচ্ছে না।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডাক্তার কাজী নাজিব হাসান জানিয়েছেন, তিনি প্রাবিত অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। ভারতীয় পানি প্রবেশ ঠেকাতে শুস্ক মৌসুমে খাল সংস্কারসহ নতুন ভাবে স্লুইসগেট নির্মাণ ও পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।