কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠনে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাসদ থেকে আসা ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে তৃণমূল বিএনপির মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। খোদ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাজাহান আলীও অভিযোগটির সত্যতা স্বীকার করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রের নির্দেশে তৃণমূলকে গতিশীল করতে ভেড়ামারা উপজেলার পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে বাহিরচর, চাঁদগ্রাম ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নসহ বেশিরভাগ ওয়ার্ডে কমিটি গঠন হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, এক প্রভাবশালী পক্ষ নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে আওয়ামী লীগ ও জাসদপন্থীদের দলে ভিড়িয়ে কাউন্সিলর বানিয়েছে, যার ফলে প্রকৃত ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
তৃণমূল নেতারা বলছেন, কিছু ওয়ার্ডে ভোটারের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ওয়ার্ডে যেখানে শেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৯৬ ভোট পেয়েছিল, সেখানে এখন কাউন্সিলর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১৯ জন। একইভাবে ধরমপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ভোট পেয়েছিল ১৯৯টি, অথচ এখন সেখানে কাউন্সিলর সংখ্যা ৭২২। এসব বাড়তি ভোটারদের বড় অংশই আওয়ামী লীগ ও জাসদ থেকে আসা।
ধরমপুরের সাদ আহমেদ সাদেক, যিনি সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন, নির্বাচনের আগেই প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। তার অভিযোগ, সভাপতি ও সম্পাদক পদে যেসব প্রার্থী ছিলেন তারা প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ ও জাসদের রাজনীতি করেছেন। একইভাবে, নির্যাতিত ও দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা আলী হোসেনও ২নং ওয়ার্ডের সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভুয়া ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য বহুবার বলেছি, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা হয়নি।’
স্থানীয়দের বক্তব্যে ক্ষোভ স্পষ্ট। একজন নাম প্রকাশ না করা নেতা বলেন, ‘যারা ১৬ বছর ধরে আমাদের ঘরছাড়া করেছে, মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে, তাদের সঙ্গেই এখন রাজনীতি করতে হচ্ছে।’
তার মতে, আওয়ামী লীগে সক্রিয় থাকা সাবেক চাঁদগ্রাম চেয়ারম্যান জানবার হোসেন এখন বিএনপির বড় নেতা হওয়ার পথে, এমনকি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার গুঞ্জনও রয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাজাহান আলী বলেন, অভিযোগ শতভাগ সত্য। আওয়ামী লীগ ও জাসদকে নিয়েই কমিটির নির্বাচন হচ্ছে। আমি প্রতিবাদ করলেও প্রভাবশালী একটি পক্ষের কাছে হার মানতে হয়েছে।
ভেড়ামারার তৃণমূল বিএনপির একাংশ মনে করছে, এভাবে দলীয় কমিটিতে অনুপ্রবেশের সুযোগ দিলে প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হবেন এবং দলের সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে।