আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলাদেশি হাফেজ আবু রায়হান ও তার সফরসঙ্গী আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা ওমরাহ পালনকালে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। জিয়ারতের সময় আবু রায়হান রওজার সামনে হেঁটে হেঁটে গজলের শুটিং করেন। এসময় ক্যামেরায় ছিলেন তার সফরসঙ্গী আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা। বিষয়টি সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে এলে সাদাপোশাকধারী সিআইডি সদস্যরা প্রথমে আবু রায়হানকে আটক করে। পরে ভিডিও ধারণকারীকে শনাক্ত করে কাইয়ুম মোল্লাকেও আটক করা হয়। দীর্ঘ আলোচনা ও যাচাই-বাছাই শেষে মুচলেকা নিয়ে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সউদী আরবের স্থানীয় সময় ফজরের নামাজের পর এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি ফেস দ্য পিপল-কে নিশ্চিত করেছেন সউদী প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী হাফেজ মুহাম্মাদ এনাম উদ্দিন।
এনাম উদ্দিন জানান, তিনি রওজা জিয়ারতে এসে তাঁর বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারেন যে আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত হাফেজ আবু রায়হানও সেখানে এসেছেন। সাক্ষাতের ইচ্ছা থাকলেও শিগগিরই খবর পান, সেখানকার প্রশাসন তাকে আটক করেছে।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, আটক হওয়ার কারণ হলো রওজার সামনে হেঁটে হেঁটে গজলের ভিডিও ধারণের সময় সেই ভিডিওতে দায়িত্বপ্রাপ্ত পোষাকে থাকা এক বাংলাদেশি খাদেম ধরা পড়ে যান। এটি ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যেভাবেই হোক, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। পরে ভিডিও ধারণকারী আব্দুল কাইয়ুম মোল্লাকেও আটক করা হয়।
এনাম উদ্দিন আরও বলেন, তারা আরবি জানেন না। তাই আমার বন্ধু আমাকে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করেন। আমি সউদী পুলিশকে বোঝানোর চেষ্টা করি যে আবু রায়হান একজন আন্তর্জাতিক হাফেজ এবং এখানকার আইন সম্পর্কে অবগত নন। কিন্তু পুলিশ জানায়, হেরেম শরিফের কর্মীদের পোশাক অত্যন্ত সম্মানজনক; অনেকে তাদের ভিডিও ভাইরাল বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। হয়তো আবু রায়হানও সেটাই করতে চেয়েছিলেন। প্রশাসন চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দেশে পাঠিয়ে দিতে পারে বলেও সতর্ক করে।
তিনি আরও বলেন, মুক্তির পিছনে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন তিনি। আমি ভেবেছিলাম তারা ছাড়া পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, হয়তো আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরবে। কিন্তু মুক্তির পর আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা বিষয়টি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার জন্য আমাদেরকেই দায়ী করে উত্তেজিতভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তখন মনে হয়েছে আমার এই তিন ঘণ্টার পরিশ্রম বৃথা গেল।
একই বিষয়ে সউদী আরবে থাকা আরও এক বাংলাদেশি প্রবাসী ফেস দ্য পিপল-এর সঙ্গে কথা বলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রবাসীর বক্তব্যও মূলত একই ছিল।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। অনেক নেটিজেন মনে করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রওজার সামনে গজলের শুটিং করা গুরুতর বেয়াদবি ও নিন্দনীয় কাজ।
এ বিষয়ে জানতে হাফেজ আবু রায়হান ও আব্দুল কাইয়ুম মোল্লার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।