রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

টাক মাথায় চুল লাগানো আর জিমে সময় কাটছে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের

এফটিপি ডেস্ক
-বিজ্ঞাপণ-spot_img

আওয়ামী লীগের পতন ও শেখ হাসিনার পলায়নের এক বছর পার হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ধরা পড়ে অপরাধের শাস্তি ভোগ করলেও বহু শীর্ষ নেতা ও দলটির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ওইসব নেতাদের অনেকেই এখন কলকাতার নিউ টাউন এলাকায় অবস্থান করছেন। সেখানে তারা বাসা ভাড়া করে বসবাস করছেন, কেউ কেউ আবার আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনদের বাড়িতে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পলাতক নেতারা সাধারণ মানুষের চোখে না পড়ার চেষ্টা করছেন। খুব একটা বাইরে বের হন না। বাসায় থেকেই তারা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেন। কেউ কেউ সময় দিচ্ছেন শরীরচর্চায়, আবার কেউ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ব্যস্ত। রান্নার কাজটিও মাঝে মাঝে নিজেরাই করতে হচ্ছে।

বেশিরভাগ নেতাই থাকছেন পশ্চিমবঙ্গের নিউ টাউন এলাকায়। এলাকাটি বেছে নেওয়ার পেছনে আছে কয়েকটি কারণ—প্রশস্ত রাস্তাঘাট, তুলনামূলক সাশ্রয়ী বাসাভাড়া, আধুনিক ফিটনেস সেন্টার, ভালো চিকিৎসা সুবিধা এবং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি অবস্থান।

দ্য প্রিন্ট দাবি করেছে, তারা শেখ হাসিনার সরকারের একাধিক সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত।

আওয়ায়মী লীগ নেতা মোহাম্মদ এ আরাফাত দ্য প্রিন্টকে বলেন, এখন তার জীবনে কোনো নির্দিষ্ট ঘুম বা বিশ্রামের সময় নেই। প্রতিটি দিন শুধু কাজেই কেটে যাচ্ছে। তার ভাষায়, মাঝে মাঝে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের পার্থক্য বুঝে উঠতে পারি না।

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে প্রথমবার প্রকাশ্যে দেখা যায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালকে। সেই সময় কলকাতার নিক্কো পার্কে তাকে দেখা গেলে মুহূর্তেই খবরটি ভাইরাল হয়। সাধারণ মানুষ বিস্মিত হয়ে পড়ে, কীভাবে তিনি দেশ ত্যাগ করলেন, অথচ কেউ জানলো না!

এ নিয়ে দেশীয় প্রশাসন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। পুলিশের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহ আলম জানান, ইমিগ্রেশন রেকর্ডে কামালের বিদেশযাত্রার কোনো প্রমাণ নেই।

নিউ টাউনে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের এক সাবেক এমপি দ্য প্রিন্ট–কে জানান, কামাল এখন সেখানকার একটি অ্যাপার্টমেন্টে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকছেন। তার দলীয় সহকর্মীরা নিয়মিত তার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি দিল্লিতেও যান বৈঠকে অংশ নিতে এবং ভারতের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে। কামালের ছেলে সাফি মুদ্দাসসির খান জ্যোতি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় গ্রেপ্তার হন।

ওই সাবেক এমপি আরও বলেন, কামাল এখন দলের নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখার দায়িত্বে আছেন। নেতাদের বারবার বলছেন—তারা এখানে বিশ্রাম নিতে আসেননি, এসেছেন টিকে থাকতে ও ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্য প্রস্তুত হতে।

দ্য প্রিন্ট আরও জানিয়েছে, পলাতক আওয়ামী নেতাদের কেউ কেউ এখন একটি ‘গোপন পার্টি অফিস’ চালাচ্ছেন বলে গুজব ছড়ালেও, নিউ টাউনে অবস্থানরত এক সাবেক এমপি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তারা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসেন বটে, কিন্তু সেটিকে অফিস বলা ঠিক হবে না। ওই জায়গাটিকে তারা শুধু ‘দলীয় মিলনকেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহার করেন।

কক্সবাজারের এক সাবেক এমপি দ্য প্রিন্টকে জানান, তার প্রতিদিনের রুটিন এখন অনেকটা নির্দিষ্ট ছন্দে বাঁধা। তিনি সকালবেলা উঠে ফজরের নামাজ পড়েন, এরপর রুমমেটের সঙ্গে স্থানীয় জিমে যান। একজন ভারোত্তোলন করেন, আরেকজন পিলাটেস ক্লাসে ভর্তি হয়েছেন।

তারা দুজন ১৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। ভাড়া মাসে ৩০ হাজার টাকা। রাঁধুনি না থাকলে নিজেরাই রান্না করেন।

সেই এমপি বলেন, রান্নায় আমি খুব একটা পারদর্শী নই। আমার ফ্ল্যাটমেটও না। তবে যেদিন রান্না করতে হয়, সেদিন ভিডিও কলে ঢাকায় আমার স্ত্রীর সাহায্য নিই।

দুপুরে কিছুটা বিশ্রামের পর সন্ধ্যায় তারা ভার্চুয়াল মিটিংয়ে অংশ নেন। মিটিং হয় কলকাতা, দিল্লি, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের আওয়ামীপন্থি কর্মীদের সঙ্গে।

প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে যুক্ত কিছু সাবেক কূটনীতিকও দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের একজন হারুন আল রশিদ। আগে তিনি ছিলেন মরক্কোয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। সরকার পতনের পর তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়।

বর্তমানে তিনি কানাডার অটোয়ায় বসবাস করছেন। সেখানে তিনি লেখালেখিতে সময় কাটাচ্ছেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন একটি ডিসটোপিয়ান উপন্যাস।

তিনি জানান, বাড়িতে নিয়মিত বই পড়েন, সীমিত বাজেট মেনে চলেন এবং বেশি দূরের কোনো কাজ নিতে চান না।

আরেক সাবেক এমপি দ্য প্রিন্টকে জানান, তিনি এখন একা থাকেন কলকাতার একটি ২-বেডরুমের ফ্ল্যাটে। এই সময়টাকে নিজের জন্য কাজে লাগাচ্ছেন। চুল পাতলা হয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি তিনি দিল্লির একটি ক্লিনিকে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়েছেন।

তার ভাষায়, চুল উঠে যাচ্ছিল। এখন নতুন করে মাথায় চুল উঠছে দেখে মনে হচ্ছে, অন্তত কিছু একটা তো ভালো হলো।

দ্য প্রিন্ট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এতটুকু স্পষ্ট আপাতত, তারা কেউই দেশে ফেরার মতো পরিবেশ দেখছেন না।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

‘জুলাইয়ের পরও আমাদের রাজনীতিবিদদের কোনো পরিবর্তন হয়নি’

জুলাইয়ের পরও আমাদের রাজনীতি- বিদদের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল(অব.) আবদুল্লাহিল আমান আজমী।রোববার(২৪ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ফেস...

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে এক চুক্তি, ৪টি স্মারক ও একটি কর্মসূচি সই

অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং ঢাকা সফররত পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি,...

কাদা ছোড়াছুড়ি না করে ভালো কাজের প্রতিযোগিতার আহবান সাদিক কায়েমের

ঢাবি প্রতিনিধিডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে সকল প্রার্থীকে ভালো কাজের প্রতিযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী...

ইকসু গঠনে এক প্লাটফর্মে ইবির সকল শিক্ষার্থী 

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলো কুষ্টিয়ার  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। কিন্তু দীর্ঘ ৪৫ বছরেও গঠিত হয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। তবে সম্প্রতি এ নিয়ে সরব...

সম্পর্কিত নিউজ

‘জুলাইয়ের পরও আমাদের রাজনীতিবিদদের কোনো পরিবর্তন হয়নি’

জুলাইয়ের পরও আমাদের রাজনীতি- বিদদের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল(অব.) আবদুল্লাহিল...

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে এক চুক্তি, ৪টি স্মারক ও একটি কর্মসূচি সই

অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং ঢাকা সফররত পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী...

কাদা ছোড়াছুড়ি না করে ভালো কাজের প্রতিযোগিতার আহবান সাদিক কায়েমের

ঢাবি প্রতিনিধিডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে সকল...