টানা হালকা ও ভারী বর্ষণ এবং ইছামতী নদী দিয়ে ভারতীয় উজানের পানিতে বন্যা প্লাবিত রয়েছে যশোরের শার্শা উপজেলার সীমান্ত এলাকা। প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে পানি। এ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন পানির নিচে। বন্যায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।ঘরের ভেতর পানি উঠায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন অনেক পরিবার। পাশাপাশি আউস ধান ও গ্রীস্মকালিন শাকসবজি নিমিজ্জিত রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আক্রান্ত ইউনিয়ন গুলোর প্রতিটি ওয়ার্ডে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ও পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডাক্তার কাজী নাজিব হাসান জানান, আগে থেকেই পানিবন্দি এলাকার স্কুল গুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা ছিল। রোববার রাত পর্যন্ত উলাশী,বাগআঁচড়া ও কায়বা ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খবর রাখা হচ্ছে। তাদের সবধরণের সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
এদিকে দিনদিন পানি বাড়ায় খারাপের দিকে যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। আবহাওয়া দফতরের সতর্কীকরণ অনুযায়ী,আগামী দুইদিন খুলনা বিভাগসহ যশোর এলাকায় অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে শার্শার বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে।
জানা গেছে, এ মাসের প্রথম থেকে অবিরত হালকা-ভারী বর্ষণ,ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার বাগআঁচড়া,কায়বা,উলাশী, গোগা ও পুটখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। এছাড়া এ সব ইউনিয়নের কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে পানিতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
ভারী বর্ষণ ও ভারতীয় উজানের পানিতে উপজেলার, রুদ্রপুর, কায়বা, ভবানিপুর, গোগা, আমলাই, সেতাই, বসতপুর, কন্যাদাহ,পুটখালী,খলসি,বারোপোতা গ্রামের মাঠঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে পানি উঠেছে। এতে প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘরে ঠিকতে না পেরে অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
সোমবার সরেজমিনে উপজেলার ওই সমস্ত ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বাড়িতে পানি,ঘের ভেড়ি একাকার হয়ে গেছে।কর্মজীবী মানুষ কাজ না পেয়ে বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহারিয়ার মাহমুদ রঞ্জু বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকেছে। এরমধ্যে ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। সবমিলিয়ে ৫শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ২টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৯টি পরিবার উঠেছেন। এসব পরিবারগুলোকে আমরা খিচুড়ি রান্না করে দিয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে।
উলাশী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুর রাশেদ জানান, ওই ইউনিয়নের কন্যাদাহ, রামেডাঙ্গা ও নারানতলা পড়ার প্রায় ২৫০ টি পরিবার গত দেড় মাস যাবত পানিবন্দি।
এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ সব গ্রামের মানুষের জীবন প্রায়ই অচল। এরইমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে ১৫ থেকে ২০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।সোমবার সরকারিভাবে খাদ্যসহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। আরো সহযোগিতার জন্য প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন।পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে জানান তিনি।
গোগা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বলেন,তার ইউনিয়নে প্রায় ১৩শ পরিবার পানিবন্দি আছে।উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখা সহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
কায়বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দ্বীপক কুমার সাহা জানান, টানা বর্ষন ও ভারতীয় উজানের পানিতে ৪০০ হেক্টর আউশ ধান এবং গ্রীস্মকালীন শাক-সবজি নিমজ্জিত রয়েছে। ৬০০ হেক্টর জমি পানির নিচে থাকায় এবারের রোপা আমন চাষ হবেনা।পানি আরও বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।