আজহারুল ইসলাম, গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরে ২৪-এর জুলাই আন্দোলনে সাংবাদিক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সাংবাদিককেই জুলাই হত্যা মামলায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। গাজীপুর মহানগরীর দত্তপাড়া মোল্লাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা সোহেল মিয়ার বাসন থানায় দায়ের করা ৩৪১ নাম্বার মামলায় ৯৯ নাম্বার আসামী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে সাংবাদিক মোজাহিদের নাম।
সাংবাদিক মো. মোজাহিদ একজন পেশাদার, সাহসী ও তুখোড় সাংবাদিক হিসেবে গাজীপুর জুড়ে সমাদৃত। তিনি দৈনিক নয়াদিগন্তের গাজীপুর জেলা (মাল্টিমিডিয়া) প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। জুলাই অভ্যূত্থানের সময় ছাত্র-জনতার তৎকালিন বাস্তব পরিস্থিতি গণমাধ্যমে তুলে ধরার কারণে সরকারি বাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মীদের রোষানলের শিকার হন তিনি। জুলাই হত্যা মামলায় তার নাম অন্তর্ভূক্তের কারণে গাজীপুর জুড়ে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
মামলার বিষয়ে সাংবাদিক মো. মোজাহিদ ফেস দ্যা পিপলকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে ছাত্ররা যেভাবে জীবনের শঙ্কা নিয়ে আন্দোলন করেছিল, যখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সত্য প্রচার করা নিষেধ ছিল, তখন আমিও ছাত্রদের মতোই জীবনের শঙ্কা নিয়ে মাঠে ছিলাম খবর জানানোর উদ্দেশ্যে। আমি তখন একাধিকবার হামলার শিকারও হয়েছিলাম। আজ আমাকে কৌশলে জুলাই হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, মামলাটিতে সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলককে এক নম্বর আসামি করে মোট ২৩৯ জনকে আসামি করা হয়। সেখানে ৯২ নম্বর সিরিয়ালের আসামির পাশে ৯৯ নম্বর দিয়ে আমার নাম যুক্ত করা হয়েছে। তারপর যথারীতি আবার ৯৩ নম্বর থেকে বাকি আসামিদের নাম যুক্ত আছে। পরে পৃষ্ঠাতে আবার ৯৯ নম্বর সিরিয়ালে অন্য এক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে! এতে সহজেই বুঝা যাচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম যুক্ত করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্টের আগে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করার কারণে তিনটি মামলায় আমাকে আসামি করা হয়, যে কারণে ২১৯ দিন কারাবরণ করতে হয়েছে। ৫ আগস্টের পরেও চাঁদাবাজ দখলদারদের বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেছি, যে কারণে অনেকের স্বার্থে আঘাত লেগেছে। যাদের স্বার্থে আঘাত লেগেছে, তাদের চক্রান্তেই এ মামলায় আমার নাম যুক্ত করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে গাজীপুর সাংবাদিক পরিষদের উপদেষ্টা শাহান সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘সত্য প্রকাশের পথ রুদ্ধ করতে সাংবাদিকদের বারবার টার্গেট করা হচ্ছে। মোজাহিদের মতো নিষ্ঠাবান সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে এই মামলা সাংবাদিক সমাজকে ভীতি প্রদর্শনের কৌশল। মোজাহিদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও মামলা হয়েছিল, এখনও হচ্ছে। তবে আমি মনে করি, মোজাহিদের মতো সাংবাদিকরা এসব জেল-জুলুম মাথায় রেখেই দুর্নীতির সংবাদ উপহার দেয় জাতিকে। জাতির স্বার্থে অন্তত এমন ন্যাক্কারজনক মামলা প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।’
দৈনিক ইনকিলাবের শ্রীপুর প্রতিনিধি এমএ মতিন বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীন সাংবাদিকতা রক্ষা করা রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব। অথচ সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকরা আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। মোজাহিদের নামে দায়ের করা মামলাটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত।’
এদিকে সাংবাদিক মোজাহিদের নামে মামলা হওয়ার ঘটনায় গাজীপুরের সাংবাদিক সংগঠনগুলো তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা স্পষ্ট তদন্তের মাধ্যমে মামলার প্রকৃত সত্য উদঘাটন এবং সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
গাজীপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ক্লাবের সভাপতি ও চ্যানেল আই এর প্রতিনিধি ফজলুল হক মোড়ল জানান, বারবার সাংবাদিকদের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা ঠুকে দেওয়া হচ্ছে। মোজাহিদ সাংবাদিকতায় এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনায় গাজীপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ক্লাব তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে। একই সঙ্গে আমরা মামলাটি অবিলম্বে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গাজীপুর জেলা শাখার আমীর ড. মো.জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সাহসী সাংবাদিক মোজাহিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। অবিলম্বে মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি করছি এবং মিথ্যা মামলা বাতিল করে মোজাহিদকে মামলা থেকে অব্যাহতি দানের দাবি করছি। মোজাহিদ শুধুমাত্র একজন সাংবাদিক নয়, সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক সাহসী কন্ঠস্বর’।
জুলাই মামলায় মিথ্যা তথ্য ও আসামী হিসেবে সাংবাদিক মোজাহিদের নাম অন্তর্ভুক্তের বিষয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মূখ্য সংগঠক অ্যাডভোকেট আলী নাছের জানান, সাংবাদিক মোজাহিদকে আমরা গণ অভ্যুত্থানের পক্ষের মানুষ ও পেশাদার সাংবাদিক হিসেবেই জানি। কোন মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ওসি আব্দুল বারিক জানান, একটি জুলাই হত্যা মামলা হয়েছে বাসন থানায়। মামলাটির সঠিক তদন্তের জন্য একজন উপপরিদর্শককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে।