পটুয়াখালীর মহিপুর সদরের এশিয়া ডেন্টাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চলছে নানা অনিয়ম। ডাক্তার নন, তবুও নামের আগে “ডাঃ” ব্যবহার করে রোগীদের সাথে প্রতারণা করছেন হারুন-অর-রশীদ নামের এক দন্ত চিকিৎসক। ভিজিট বাবদ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হলেও চিকিৎসার মান নিয়ে রোগী ও এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, দাঁতের চিকিৎসক হয়েও হারুন প্রায়ই চোখের রোগীর চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে, যখন আদনান (৪) নামের এক শিশুকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিপাকে পড়ে তার পরিবার। শিশুটির স্বজনরা জানায়, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল হাকিমের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে তার পরিবর্তে তার ভাই হারুন চিকিৎসা দেন। পরে জানা যায়, হাকিম উপস্থিত না থাকায় মোবাইল ফোনে ছবি পাঠিয়ে তিনি ওষুধ লিখে দেন এবং সেই প্রেসক্রিপশন হারুন রোগীকে সরবরাহ করেন।
এ বিষয়ে হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করে বলেন, “আমি সরাসরি চিকিৎসক নই। রোগীর ছবি আমার ভাইকে পাঠাই, তিনি যা লিখেন, তার প্রেসক্রিপশনে আমি রোগীকে লিখে দিই। তবে এতে রোগী সুস্থ হবে।”
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ ভিন্ন। তারা দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে এশিয়া ডেন্টালে এমন ভুয়া চিকিৎসা চলছে। অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। সেরাজপুর এলাকার বাসিন্দা শাহ-জাহান কাজী বলেন, “এই হারুন তো দাঁতের চিকিৎসাও ঠিকমতো জানে না। একবার এক রোগীর সমস্যা ছিল এক দাঁতে, সে ভুল করে অন্য দাঁত তুলে দিয়েছে। এতে বড় ধরনের বিপত্তি ঘটে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।”
অন্যদিকে মহিপুরের সোহেল হাওলাদার জানান, “আমরা জানি, হাকিম চোখের ডাক্তার, হারুন দাঁতের। কিন্তু হারুন প্রায়ই হাকিমের নামের প্রেসক্রিপশনে চোখের চিকিৎসা দেন। রোগীদের সঙ্গে প্রায়ই ঝামেলা হয়। কিন্তু তবুও সে থামছে না।”
অভিযোগের বিষয়ে ডা. হাকিমকে মুঠোফোনে প্রশ্ন করলে তিনি সাংবাদিকদের কথা না শুনেই দেখা করার আহ্বান জানান এবং পরে ফোন কেটে দেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ এ ঘটনায় তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, “একজন চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে অন্য কেউ রোগী দেখার নিয়ম নেই। দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।”
পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. খালেদুর রহমান মিয়া জানান, “অন্যের প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসা দেওয়া আইনবিরোধী। অভিযোগ সত্য হলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী রোগী ও সচেতন মহল দ্রুত প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।