মো. জসিম উদ্দীন জোসি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ সার্জন হয়েও পাসপোর্টে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ফিজিশিয়ান। পারিবারিক কারন দেখিয়ে সরকারি হাসপাতাল থেকে ৭ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি নিয়েছিলেন। নিজের সরকারি কর্মকর্তা বা বিশেষজ্ঞ সার্জন পরিচয় লুকিয়ে কোন ধরনের গর্ভমেন্ট অর্ডার (জিও) ও নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) ছাড়াই করেছেন বিদেশ ভ্রমণ।
লুকিয়ে গোপনে এমন বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগ উঠেছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মো. ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে। হাসপাতাল ও রাষ্ট্রের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে বা অবহিত না করেই বেআইনিভাবে ৭ দিনের এমন বিদেশ ভ্রমণ করেছেন ডা. ইসমাইল হোসেন।
নিয়ম অনুযায়ী, এনওসি ও জিও ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা বিদেশ গেলে, তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়, যার মধ্যে চাকরিচ্যুতিও অন্তর্ভুক্ত। অনুমতি ছাড়া বিদেশ যাওয়াকে সরকারকে ধোঁকা দেওয়া এবং তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট গ্রহণের অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, যা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
নথি অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবী হলেও তথ্য গোপন করে পাসপোর্টে নিজেকে একজন ফিজিশিয়ান হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ সার্জন ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের কনসালটেন্ট (অর্থো-সার্জারী) ডা. ইসমাইল হোসেন। অথচ তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট গ্রহণ এবং অনুমতি ছাড়া দেশত্যাগের অপরাধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী গুরুদণ্ড হিসেবে চাকরিচ্যুতির কথা বলা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের কনসালটেন্ট (অর্থো-সার্জারী) ডা. মো. ইসমাইল হোসেন গত ০৩ সেপ্টেম্বর থেকে ০৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭ দিন অবস্থান করেন ইউরোপের দেশ স্পেনে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত ০৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে স্পেনগামী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে স্পেন যান ডা. ইসমাইল হোসেন।
গত মঙ্গলবার (০৯ সেপ্টেম্বর) মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি বিমানে স্পেন থেকে দুপুর ১২টায় ঢাকায় এসে পৌঁছান তিনি।
এদিকে, ঢাকায় নেমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে ক্লিনিকে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখার কথা জানান ডা. ইসমাইল হোসেন। এমনকি তিনটি প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে রোগী দেখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের ম্যাক্স হাসপাতাল, জারা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও দিগন্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিসিপশন ও ডা. ইসমাইলের সিরিয়ালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে রোগী দেখার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ম্যাক্স হাসপাতালে ডা. মো. ইসমাইল হোসেনের চেম্বারের সিরিয়ালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি জানান, বুধবার বিকেল ৪টা থেকে তিনি নিয়মিত রোগী দেখবেন। দিগন্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিসিপশনিস্ট এক নারী জানান, ৬-৭ দিন পর দুপুর দেড়টা থেকে চেম্বার করবেন ডা. ইসমাইল হোসেন। অন্যদিকে, তিনি দুপুর ১টা থেকে নিয়মিত চেম্বার করছেন বলে জানান, জারা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিসিপশনিস্ট।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মুহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, পারিবারিক কারন দেখিয়ে ০৩ সেপ্টেম্বর থেকে ০৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমার কাছে নৈমিত্তিক ছুটি নিয়েছেন ডা. মো. ইসমাইল হোসেন। তবে তার বিদেশ গমনের বিষয়টি আমার জানা নেই। এনিয়ে প্রশ্ন উঠলে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালের কর্মরত থেকে এনওসি বা জিও ছাড়া বিদেশ ভ্রমণের কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বুধবার সকালে তিনি (ডা. ইসমাইল) অফিস করেছেন বলেও জানান তত্বাবধায়ক ডা. মুহাম্মদ মশিউর রহমান।
এদিকে, সাতদিন ধরে ছুটির কারনে ভোগান্তিতে পড়েছেন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। তার চেম্বার তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এমনকি অনেক রোগীকে ঘুরে যেতে দেখা গেছে।
সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়নের চামাগ্রাম এলাকার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে এসেও ঘুরে যেতে হয়েছে। ভাঙ্গা পা নিয়ে বারবার আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। তবুও ডাক্তারের দেখা পাইনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা বলেন, ডা. ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দফায় দফায় অভিযোগ দিলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পারিবারিক কারন দেখিয়ে ছুটি নিয়ে তার বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। পরিচয় লুকিয়ে গোপনে বিদেশ ভ্রমণের ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে, বছরখানেক আগেও একই কায়দায় চীন ভ্রমণের অভিযোগ রয়েছে ডা. মো. ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে। এনিয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মো. ইসমাইল হোসেনকে মঙ্গলবার (০৯ সেপ্টেম্বর) ও বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জেলা হাসপাতালে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি।