শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মেডিকেল-ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, ঘটনায় জড়িত সাত চিকিৎসক গ্রেপ্তার

-বিজ্ঞাপণ-spot_img

২০২০ সালে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। ওই ঘটনায় রাজধানীর মিরপুর থানায় পাবলিক পরীক্ষা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এসআই প্রশান্ত কুমার সিকদার।

তিন বছর পর গতকাল শনিবার রাতে সিআইডি আকস্মিকভাবে জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাত চিকিৎসকসহ মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবববার সংবাদ সম্মেলন করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, প্রশ্ন ফাঁস চক্রে রয়েছেন মেডিকো কোচিং সেন্টারের কর্ণধার ডা. জোবাইদুর রহমান জনি। তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ছাড়া গ্রেপ্তার আখতারুজ্জামান তুষার ই-হক কোচিং সেন্টারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এই দু’জন ২০০৫ সাল থেকেই প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত।

সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সাত চিকিৎসকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন।

এ বিষয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূল হোতা ছিলেন। গ্রেপ্তার চিকিৎসকরা জসিম সিন্ডিকেটের সদস্য। এ ছাড়া প্রশ্ন ফাঁসের মামলায় বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার আরও কয়েকজন আসামি জবানবন্দিতে জড়িত অনেকের নাম প্রকাশ করেছেন। তবে ঘটনার পর পর অনেকে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই এ চক্রের ওপর নজর রাখছিলেন গোয়েন্দারা। প্রশ্ন ফাঁসে সাত চিকিৎসকের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা দেখে তদন্তকারীরাও বিস্মিত। গ্রেপ্তার চিকিৎসকদের মধ্যে অন্তত দু’জন সরকারি হাসপাতালের। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আগে তাদের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি কর্মকর্তারা।

একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবও খতিয়ে দেখা হয়েছে। কয়েকজনের হিসাব নম্বরে লাখ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। বিদেশে তারা অর্থ পাচার করেছেন– এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।

গ্রেপ্তার চিকিৎসকদের মধ্যে কয়েকজন বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে জড়িত বলেও সূত্রে জানা গেছে৷

কোচিং সেন্টারের আড়ালে তারা মেডিকেলের প্রশ্নপত্র নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করতেন। এর বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন তারা। যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে চিকিৎসক ছাড়াও ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশার লোক আছেন। চিকিৎসকদের মধ্যে কয়েকজনের বাড়ি ঢাকায়।

প্রশ্ন ফাঁসের মামলার তদন্তে যুক্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় ২০২০ সালে প্রথমে সানোয়ার হোসেন নামে একজনকে মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও কয়েকজন গ্রেপ্তার হন। তাদের মধ্যে ছিলেন জসিম, পারভেজ খান, জাকির হোসেন ওরফে দিপু ও মোহাইমিনুল ওরফে বাঁধন। গ্রেপ্তার জসীমের খালাতো ভাই আবদুস সালাম স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর প্রেসে মেশিনম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মূলত সালামের মাধ্যমে প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস করতেন জসিম। এর পর তিনি সিন্ডিকেটের বিভিন্ন সদস্যের কাছে পাঠাতেন। যে সাত চিকিৎসক এবার গ্রেপ্তার হলেন, তারা জসীমের অত্যন্ত বিশ্বস্ত। তদন্তে উঠে আসে, জসিম প্রশ্ন ফাঁস করে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা কামিয়েছেন। ঢাকায় দুটি বাড়ি, একাধিক গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর।

ঘটনার সূত্রে জানা যায়, মেডিকো কোচিং সেন্টারের মালিক ডা. জনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্রাঞ্চ খুলে কৌশলে প্রশ্ন ফাঁস করে আসছিলেন। প্রশ্ন বিক্রির সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে তিনি জসীমের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ২০২০ সালে গ্রেপ্তারের পর থেকে জসিম কারাবন্দি। তাঁর ৩৮টি ব্যাংক হিসাব আছে। এসব অ্যাকাউন্টে আছে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তাঁর স্ত্রী শারমিন আরা জেসমিনের ১৪টি অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সিন্ডিকেট দেশজুড়ে ছড়ানো ছিল।

জসিম ও তাঁর সহযোগী সালামের পরিবারের একাধিক সদস্য ও চিকিৎসক এবং চারটি কোচিং সেন্টারের সংশ্লিষ্টতার কথাও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। জসীমের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টব ইউনিয়নে। অভাব-অনটনের সংসার ছিল তাদের। খালাতো ভাই সালামের সঙ্গে তিন দশক ধরে তাঁর প্রেসে যাতায়াত ছিল। এক পর্যায়ে দু’জন মিলে গড়ে তোলেন চক্র। এতে যুক্ত করেন ডাক্তার, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে।

সিআইডি তদন্তে উঠে এসেছে, এই চক্রের সদস্য হয়ে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের প্রশ্ন ফাঁস শুরু করেন সালাম। ছাপা হওয়ার সময় প্রেস থেকে কৌশলে প্রশ্ন সরাতেন তিনি। এরপর সেই প্রশ্ন খালাতো ভাই ইন্স্যুরেন্সের কর্মী জসীমের হাতে দিতেন। জসিমই সারাদেশে তা ছড়িয়ে দিতেন। বিনিময়ে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫-১০ লাখ টাকা নিতেন তারা।
চক্রটি ঘিরে চিকিৎসক, মেডিকেল শিক্ষার্থীসহ অনেককে নিয়ে একটি বড় ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল।

এর আগে ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা করেছিল। সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সিআইডি। 

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বহিস্কৃতদের নিয়ে প্রচারনার অভিযোগ

ঢাবি প্রতিনিধিছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা থাকায় ছাত্রদল থেকে বহিষ্কৃতদের নিয়ে ডাকসুর প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিরুদ্ধে।শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) শহিদুল্লাহ হলের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক মোসাদ্দেক আল হক...

দাবি পূরণের লিখিত আশ্বাসে অনশন ভাঙলো ববি শিক্ষার্থীরা

ববি প্রতিনিধিআগামী ১৫ দিনের মধ্যে চারটি দাবি পূরণ করা হবে—উপাচার্যের এমন লিখিত আশ্বাসে প্রায় সাড়ে ২৩ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা।শুক্রবার...

হল সংসদে ছাত্রদলের প্রার্থীর গবেষণায় অসাধারণ সাফল্য, প্রকাশিত হতে যাচ্ছে বইও

ঢাবি প্রতিনিধিঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের বিজয় একাত্তর হল সংসদে ছাত্রদল মনোনীত পাঠকক্ষ বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান পলাশের গবেষণায় অসাধারণ...

আচরণবিধি ভঙ্গ করে ভোটারদের খাওয়ানোর অভিযোগ ছাত্রদল-বাগছাস ঐক্যের

ঢাবি প্রতিনিধিঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভোটারদের খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রার্থী...

সম্পর্কিত নিউজ

ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বহিস্কৃতদের নিয়ে প্রচারনার অভিযোগ

ঢাবি প্রতিনিধিছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা থাকায় ছাত্রদল থেকে বহিষ্কৃতদের নিয়ে ডাকসুর প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের...

দাবি পূরণের লিখিত আশ্বাসে অনশন ভাঙলো ববি শিক্ষার্থীরা

ববি প্রতিনিধিআগামী ১৫ দিনের মধ্যে চারটি দাবি পূরণ করা হবে—উপাচার্যের এমন লিখিত আশ্বাসে প্রায়...

হল সংসদে ছাত্রদলের প্রার্থীর গবেষণায় অসাধারণ সাফল্য, প্রকাশিত হতে যাচ্ছে বইও

ঢাবি প্রতিনিধিঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের বিজয় একাত্তর হল সংসদে ছাত্রদল...